অশুভ শক্তি

Home/অশুভ শক্তি
See this post 2,224 views

অশুভ শক্তি

অশুভ শক্তি যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে – প্রধানমন্ত্রী

অশুভ শক্তি বলতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা কি আপনি আমি জানি? সরকার কি কোন ব্যাখ্যা দিয়েছেন? আমি জানি না অর্থাৎ জানা নেই এটা আমার অজ্ঞতা। আমাদের সমাজে তিন ধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এক. ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে অর্থাৎ যারা ধর্মকে সর্বোচ্চ জীবন ধারণের মাপকাঠি হিসাবে মেনে চলে। সে মুসলিম হোক, হিন্দু হোক বা অন্য যেকোন ধর্মের মানুষ হোক না কেন তারা পরিবার তথা সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন জারি রাখার পক্ষে। এই গোষ্টি মনে করে ধর্মীয় সংস্কৃতি সর্বোৎকৃষ্ট জীবন বিধান। দেশের আইন-কানুন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অধীন। রাষ্ট্রের সার্ভৌমত্ব কেউ অস্বীকার করে না। এবং রাষ্ট্র সকল নাগরিকের আইনী ব্যবস্থা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমতা বাজায় রাখে। পৃথিবীতে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাস সবচেয়ে কার্যকর ভুমিকা রেখেছে। রাষ্ট্রের সংবিধানও ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। এর কারণ ধর্মের বিশ্বাসের মূল উপজীব্য হলো পারলৌকিক বিশ্বাস। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে জান্নাত ও জাহান্নামের সুখময় শান্তি ও ভয়ঙ্কর শাস্তির ব্যাপারে নিশ্চিত বিশ্বাস। আমরা যারা মুলিসম তারা আল্লাহ সুবহানাতালার একাত্ববাদের উপর অবিচল বিশ্বাস রাখি। এর মানে নিজের বা অতি আপনজনের জীবনের চেয়ে আল্লাহ ও তার রসূল হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মর্যাদা অনেক বেশি তা মেনে চলি। প্রত্যেক মুসলিম কুর’আনকে সম্পূর্ণ ও অদ্বিতীয় জীবন বিধান হিসাবে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে অবশ্যই মেনে চলে।  মুসলমানরা ধর্মীয় রীতি নীতির ক্ষেত্রে কোন আপস করে না। আবার ইসলাম সামাজিক সাম্যকেও অগ্রাহ্য করে না। ইসলাম কোন ধরণের অশলীলতা বরদাস্ত করে না। যেমন – মাদক সেবন, ব্যভিচার, অশালীন পোশাক, ইভ টিজিং, ধর্ষণ, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় করা, মিথ্যার চর্চাকে কৌশল বলে চালিয়ে দেয়া, গিবতের মাধ্যমে ক্ষমতা আক্রে থাকা ইত্যাদি ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এসব যাদের কাছে পাপ হিসাবে গন্য হয় না তাদের জন্য পৃথিবী ও পরকালে কোন মর্যাদা নেই। মুসলিমরা বিশ্বাস করে আল্লাহ যাকে মর্যাদা দেন কে তাকে অমর্যাদা করে আর আল্লাহ যাকে অমর্যাদা করেন কে তাকে মর্যাদা দেয়? প্রত্যেক মুসলামিই জানেন, মুসলিমরাই মুনাফিক হয়। আর মুনাফিকরা হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। এবং মুনাফিকদের শাস্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট হবে। মুনাফিক কাদের বলে এরা মুখে কালিমা পড়ে, নামজ পড়ে, রোজা করে হজ্জ পালন করে কিন্তু যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, অন্যের সম্পদ গ্রাস করে এবং শপথ করে শপথ রক্ষা করে না। মুনাফিকের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসাবে একজন দুর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে বিবেচনা করা যেতে পারে। ধরা যাক একজন মধ্যমশ্রেণীর পুলিশ অফিসার তার নাম হাছান। পুলিশ অফিসার হাছান উদ্দেশ্যমূলকভাব একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি মান্নানের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করল। যেহেতু মামলাটি মিথ্যা সেহেতু তিনি একটি মিথ্যা চার্জশিট আদলতে দাখিল করলেন এবং বিচারক তাকে সাজা দিয়ে দিল। এখন দেখা যাক পুলিশ অফিসার হাসন কি একজন মুনাফিক? প্রথমতঃ পুলিশ অফিসার হাছন মান্নানের বিষয়ে শতভাগ মিথ্যা বলেছেন, দ্বিতীয়তঃ পুলিশ অফিসাররের দায়িত্ব ছিল মান্নানের জান মালের হেফাজত করা অথচ সে মান্ননের জান মালের ক্ষতি সাধন করেছেন, তৃতীয়ত, হাছান চাকরিতে যোগ দেয়ার পূর্বে শপথ নিয়েছিলেন, যে কোন মূল্যে তিনি শিষ্ঠের পালন দুষ্টের দমন করবেন। কিন্তু তিনি মান্নানের ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে শপথ ভঙ্গ করছেন। তা হলে দেখা গেল পুলিশ অফিসার হাছান মুনাফিক হওয়ার সবগুলো শর্ত চমৎকারভাবে পূরণ করেছেন। কাজেই হাছান একজন নিকৃষ্ট মুনাফিক। এখন বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে হাছানকে প্রশ্ন করেলে তিনি নিজের দোষ স্বীকার না করে বলবেন ঊর্ধতন কর্মকার্তার (উপরের) নির্দেশে তিনি এই মিথ্যা মামলা করেছেন। এখন ঊর্ধতন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনিও বলবেন বাধ্য হয়েই উপরের নির্দেশে (মানে সরকারের নির্দেশে) তিনি এই জাতীয় নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাহলে একজন মুসলিমের মুনাফিক হওয়ার সুযোগ নেই ইসলাম ধর্মে অর্থাৎ আল্লাহর বিধানে। আর বাংলাদেশে অমুনাফিক মুসলিমের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ৮০ শতাংশ। এরকম বিপদগ্রস্থ পুলিশ অফিসারকে বলব আপনি একজন ভাল আলেমের সাথে কথা বলুন। যদি অমুনাফিক মুসলিম হিসাবে মৃত্যু বরণ করতে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে চান।

দ্বিতীয়ত, এই দলের মানুষরা খুবই বৈচিত্র রাখে। এরা মনে করে ধর্ম একটা সামাজিক বিষয়। সমাজের প্রয়োজনে ধর্মের উদ্ভব হয়েছে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়ায় তারা জুম্মার নামাজে হাজিরা দেয়। আবার দেয়ও না। ধর্ম অল্পস্বল্প মানলেও মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে উদাসীন। ভাবটা এরকম যে যদি পরকাল বলে কিছু থাকে তখন বিপদ বুঝে বলতে পারবে, আল্লাহ আমি তোমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, মাঝে মধ্যে নামাজ পড়েছি। রোজা না রাখলেও ঈদের নামজ পড়েছি। সামাজিক সম্মান বৃদ্ধির জন্য কেউ কেউ হজ্বে যেয়ে থাকে। এদের মত হলো, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। এরা হালাল হারাম মানে না। পুজার প্রসাদ থেকে পাঠা বলির মাংশ মজা করে খায়। এদের কাছে ধর্মীয় সংস্কৃতি মানেই উৎসবের ব্যাপার। আমার ছাত্র জীবনে অনেক হিন্দু বন্ধু ছিল তারা এখনও আমার ভাল বন্ধু। আমি কখনো তাদের ঈদের দাওয়াতে আনতে পারিনি। কারণ মুসলিমরা গরুর মাংশ খায়। এতে বোঝা যায় প্রত্যেক ধর্মের মূলে রয়েছে তার বিশ্বাস। ইসলাম যেহেতু সবচেয়ে প্রবীণ এবং একই সাথে নবীন ধর্ম। কুর’আন ও হাদিস যার ভিত্তি। কুর’আন এমন এক মহাগ্রন্থ যেখানে কোন ভুল এখন পর্যন্ত কেও আবিষ্কার করতে পারেননি। কুর’আন শুধু বিজ্ঞান বা নির্ভুল তথ্যের গ্রন্থই নয় মানব জীবন কিভাবে চলবে তার সুস্পষ্ট বিবরণ/নির্দেশ রয়েছে। অন্য ধর্মের লোকদের সম্পর্কেও দিক নির্দশনা রয়েছে কুর’আনে। তাই সকল ধর্মের মানুষের জন্য কুর’আন। আর এই মহাসত্য কুর’আন যিনি পাঠিছেনে তিনি মুসলিমদের আল্লাহ। সুতরাং কুর’আন মানুষের রচিত গ্রন্থ নয়। মানুষের রচিত হলে অনেক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হতো। তা হলে কুর’আনে বর্ণিত মৃত্যুর পরের জীবনের ঘটনাবলীও হবে সত্য। কাজেই প্রকৃত মুসলিম কোনভাবেই দুনিয়ার শাসককে ভয় করে আল্লাহকে ভুলে যাবে না। বরং আরো শক্ত করে আল্লাহর রজ্জু ধরে রাখবে।

যে গোষ্ঠির কথা বলছিলাম, এর যেহেতু ধর্মীয় বিষয়কে সামাজিক বলে মনে করে থাকে সেহেতু তারা দুনিয়ার সুখের জন্য যা খুশি করতে পারে। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ঘুষ খাওয়া বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করা বলেন, অন্যের জমিজমা দখল করা বলেন, ব্যাভিচার করা বলেন, মাদক সেবন বলেন সবই করতে পারে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এরা সমাজে বেশ শক্তশালী। যেহেতু এরা ধর্মেও আছে অধর্মেও আছে ফলে তারা ধর্মসভার অনুষ্ঠানে যেমন সভাপতি হন তেমন যাত্রাপালার অনুষ্ঠানেও সভাপতির চেয়ার অলংকৃত করেন। বাস্তবে এরা সমাজে ভিতিকর হিসাবেই বিচরণ করে থাকেন। ব্যতিক্রমও দেখা যায়।

ইসলামের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হল ক্ষমা। অর্থাৎ সকল মানুষের জন্য তওবা করার সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছেন।  ইসলামে আমরা নিজেকে নিষ্পাপ দাবী করতে পারি না। কেননা শয়তান সবসময় মুমিনকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে যায়। শয়তানের ধোকায় পড়ে গেলে বড় বিপদ। আবার কোন পাপী বান্দা তার ভুল বুঝে অনুশোচনা এবং আর পাপ কাজে লিপ্ত হবো না প্রতীজ্ঞায় আল্লাহ সুবহানাতালার কাছে ক্ষমা প্রর্থণা করলে আল্লাহ তার সেই পাপী বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। নিষ্পাপ করে দেন। এই জন্য ইসলেমের অন্যতম অনুপ্রেরণা ‘ পাপীকে নয় পাপ ঘৃণা কর’। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদ দাঁড়িয়ে ‘কোটা সংস্কার চাই’ আন্দোলনকারীদের যেভাবে রাজাকারের বাচ্চা বলে আক্রমণ করলেন তাতে পুরা জাতি বিষ্মিত হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী যদি ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী হতেন তাহলে এভাবে কথা বলতে পারতেন না। আল্লাহ কুর’আনে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, পিতার পাপ পুত্র বহন করবে না আবার পুত্রের পাপ পিতা বহন করবে না। কোন দেশের নাগরিকত্বের মৌলিক শর্ত হলো জন্মসূত্র। আল্লাহ যে মানব সন্তানকে যে কোন পিতার ঔরসে এবং মায়ের গর্ভে জন্ম দিতে পারন। আর আপনি মরণশীল মানুষ হিসাবে আল্লাহর সার্ভৌমত্ব অস্বীকার করছেন? ইতিহাসে এমন আছে কি সাধুর ছেলে সাধু হয় আর চোরের ছেলে চোরই হয়। কিংবা ধনীর ছেলে ধনীই হয় আর গরীবের ছেলে গরীবই হয়। আজ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, এমন কি আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভাঙ্চুরের মত দুষ্কর্ম করছে এগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা!! বিষ্ময়কর! আপনারা এর জন্য দায়ী কারণ এই সব খারপ লোকদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেননি বা নিতে দেন নি। যখন আর কোন উপায় থাকে না তখনই শুধু হালকা আইনগত ব্যবস্থা। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমনি’ কিংবা সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দুটো পরিবারকে দেখানো হয়েছে। ওই দুটো পরিবার কি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নয়? যদি সার্টিফিকেট প্রাপ্তরাই শুধু দেশ স্বাধীন করত তাহলে দেশ নয় মাসে স্বাধীন হত? কাজেই মাননীয় কৃষিমন্ত্রী আপনার মন্তব্য শুধু অবান্তরই নয় দুঃখজনক। আমার বড় চাচা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, চাচী মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন। এতে তার বেঁচে থাকটা নিরাপদ হয়েছে। এটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। আমার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘খণ্ডিত ভালোবাসা’ তেও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান স্বাধীনের দেশপ্রেমের ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। এই দেশ আমার আপনার সবার। সুতরাং অন্যায় করলে রাজাকারের সন্তানের যেমন বিচার হবে একইভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরও বিচার হবে। ভুলে গেলে চলবে না আমরা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। আর আল্লাহই আমাদের এই দেশের নাগরিক করে পাঠিয়েছেন। কাজেই বঙ্গবন্ধুর কন্যার সরকারের দায়িত্ব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সেবক (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেকে জনগণের সেবক) হিসাবে রাষ্ট্রের প্রগতিকে এগিয়ে নিবেন। এটাই জাতি প্রত্যাশা করে।

তৃতীয়ত, এই দল হলো নাস্তিক। তারা আল্লাহ তথা স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। এই গোষ্ঠির সবচেয়ে বড়গুন মানুষ সৃষ্টির সেরা তথা মানুষের উপরে কেহ নাই তত্ত্বের উপর বিশ্বাসী হওয়ায় তারা উত্তম ব্যবহার চর্চা করে থাকেন। এবং তাদের মতাদর্শ মানুষের মাঝে শান্তিপূর্ণ উপায় প্রচার করেন। তবে দেশের সঙ্কটে তারা সংগ্রাম ও প্রতিবাদ করেন। এরা যা করেন সবই নিয়মতান্ত্রিক ও আদর্শের ভিত্তিতে। তারা ধর্ম না মানলেও ধর্মের বিরুদ্ধে তেমন কথা বলে না। বাংলাদেশে এরা বাম রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে পরিচিত।এরা সবসময় ধর্মীয় গোড়ামির বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়ে থাকেন। এরা যেহেতু পরকাল মানে না ফলে সব ধরনের সংস্কৃতিতে তারা মানিয়ে নেন। এরা জাগতিক সাম্যের পক্ষে। বিশ্ব সমাজে এদের অবস্থান সতন্ত্র এবং নিয়মতান্ত্রিক।যেহেতু তারা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার মানে না। হয়ত এই জন্যই বেশিরভাগ সংগঠন সরকারের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

চতুর্থত, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বর্তমানে সারা বিশ্বের সমস্যা। তবে বাংলাদেশে এ দুটোর ধরণ আলাদা। জঙ্গিবাদ মূলত ইসলামের নামে উদ্ভব হয়েছে। মানুষকে আতঙ্কিত করা, সরকারকে বিব্রত করা, বোমা ফাটিয়ে মানুষ হত্যা করা সবই এক ধরণের বিকৃত খেলা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ইসলামের প্রাথমিক নৈতিক দায়িত্ব। সমাজে ও রাষ্ট্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা মুসলিম শাসকের মৌলিক দায়িত্ব। শুধু বিনা বিচারে জঙ্গিদের হত্যা করলেই সমস্যা সমাধান হবে। তাদেরকে গ্রেফতার করে জঙ্গি হওয়ার কারণগুলো জাতির কাছে তুলে ধরতে হবে। সরকার সবসময় যেটা বলে থাকেন, জঙ্গিরা বেহেশতের লোভে এই সব হত্যাকাণ্ড চালায়। ধর্মে বিশ্বাসী সব মানুষেরই বেহেশতে যাবার লোভ আছে। তাহলে সরকারের দায়িত্ব ইসলামের প্রচার বৃদ্ধি করে এরা যে ভুল পথে আছে তা তাদেরকে বোঝান। RAB এর অভিযান শেষে বলা হয় তাদের কাছে জঙ্গি বই পাওয়া গিয়েছে। দুর্ভাগ্য এই যে এই বইগুলোর একটিও সরকার নিষিদ্ধ অথবা এর লেখক বা প্রকাশককে গ্রেপ্তার করেনি সরকার। যদি সরকার এই কাজগুলো করত তা হলে জাতি জানতে পারত কি ধরণের ইসলাম বিরোধী বই পড়ে তরুণরা জঙ্গি হয়ে উঠছে। শুধু প্রপাগণ্ডা চালিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। সরকারকেই এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সরকার জঙ্গিদের মিডিয়ায় কথা বলতে দিতে পারে। এতেও আমরা তাদের মুখ থেকে তাদের জঙ্গি হওয়ার উদ্দেশ্য জানতে পারব। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। জঙ্গি তৎপরতার কারণে বাংলাদেশে ইসলাম চর্চা সীমিত হয়ে গেছে। সরকারের দায়িত্ব এই অশুভ তৎপরতা বন্ধের মাধ্যমে দেশীয় জঙ্গিবাদের সমস্যা সমাধান করা। সরকারকে মনে রাখতে হবে, মানুষ মেরে যেমন জঙ্গিবাদ (ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করা যাবে না তেমনি জঙ্গি মেরে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না।

পরিশেষে, সরকার সবসময় অশুভ শক্তির কথা বলে আসছেন। অশুভ শক্তি কারা সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ১লা বৈশাখে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য বলেছেন, অশুভ শক্তিকে আর যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। এতে বোঝা যায় পৃর্বে ক্ষমতায় ছিল এমন রাজনৈতিক দলকেই তিনি বুঝিয়েছেন। জাতীয় পার্টি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ছায়া হয়ে আছে সেহেতু তিনি অশুভ শক্তি বলতে বিএনপিকেই বুঝিয়েছেন। যে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি মেজর জিয়া নামেই খ্যাত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের কথা বলার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, নাগরিক অধিকার পাওয়ার দাবীতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন এবং তাঁরই দেখান পথ ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতেই যদি এ দেশের মানুষ ভোট দিত তাহলে ১৯৫৪ ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগই জয় লাভ করত যুক্তফ্রন্ট বা আওয়ামী লীগ নয়। এ দেশের সাধরণ মানুষ অল্পতেই খুশি থাকে, এদের ভ্রাতিত্ববোধ প্রবল কিন্তু দেশে যদি আইনয়ের শাসন না থাকে তখন বৈপরীত্ব দেখা দেয়। সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী যদি পুরো জাতিকে রাজাকেরের বাচ্চা বলে গালি দেয় তখন সরকার প্রতি আস্থা কি করে থাকে? সরকার যে কঠিন প্রতিহিংসা পরায়ণ সেই ম্যাসেজই জনগণ পায়, নয় কি? জনগণ শান্তি চায়। যেমন প্রধানমন্ত্রী অশুভ শক্তি বলে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার সমালোচক তথা মুসলমানদের সমালোচনা করেছেন। অথচ মুসলমানরা এদেশে ৯০ ভাগের বেশি। দেশ ভাগের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এদেশের মানুষ নিজের দেশকে পাকিস্তানের অংশ করেছিল। সেই ধর্মীয় সিদ্ধান্তের কারণে আজ আমরা স্বাধীন জাতি। মঙ্গলশোভা যাত্রার ঐতিহ্য অনেক দিনের পুরোন। এটা ঠিক কোন মুসলিমের পক্ষেই মেনে নেয়া সম্ভব না হাতি, ময়ূর, ঢাক-ঢোল বাজনা ইত্যাদির মাধমে পরিচালিত শোভাযাত্রার মধ্যে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়া যাবে। এটা অসম্ভব। সুতরাং এটা একটা জাতির সর্বজনিন উৎসব করা রাষ্ট্রীয় দাবী হওয়া উচিত নয়। বরং মঙ্গল শোভাযাত্রাকে স্বাধীন নিরপেক্ষ নববর্ষের উৎসব হিসাবেই দেখা উচিত। যা এতো বছর ধরে চলে আসছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিও যদি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মতই বৃহৎ জনগোষ্ঠিকে অশুভ শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেন তা হলে জাতির কাছে বিষয়টি জটিল হয়ে যায়। এ দেশের মানুষ তাদের ধর্মকে ভালোবাসে। তরুণ সমাজ ধর্মের মধ্যে জীবনের শান্তি খোঁজে। মানুষ কখনোই ধর্মকে উপেক্ষা করতে পারে না।

২৪হেল্পলাইন.কম/এপ্রিল, ২০১৮/অভ্র ওয়াসিম/কবি, লেখক, গবেষক ও রাজনীতিক

By | 2018-10-18T06:58:52+00:00 April 25th, 2018|Comments Off on অশুভ শক্তি