বিশ্বব্যাংক ঘটা করে বিশ হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু থেকে সরে দাঁড়ালো, সব দাতা সংস্থাকে নিয়ে ম্যানিলায় মিটিং করে আকারে ইঙ্গিতে অন্য প্রকল্প থেকেও সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালো। জাইকা কি করছে জানেন? সরে যাওয়া তো দূরের কথা, উল্টা বাইশ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্পে এগিয়ে আসলো, যা পদ্মাসেতু প্রকল্পের চেয়েও দুই হাজার কোটি টাকা বেশি এবং আমার জানামতে টাকার অংকে বাংলাদেশে এ যাবত কালে যে কোন দাতা সংস্থা কর্তৃক গৃহীত সর্ববৃহৎ প্রকল্প।
গুলশান হলি আর্টিজান হামলায় নিহত হন সাত জাপানি। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী ছিলেন। সাত জাপানির মধ্যে ছয়জনই মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষাকাজে নিয়োজিত ছিলেন।
পরের দিন সম্ভবতঃ মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও ছিল। আমি মেট্রোরেল প্রকল্প এবং গুলশান হামলার মধ্যে কোনও যোগসূত্র খুঁজছি না!
অন্যান্য দেশ যখন গুলশান হামলার পর বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা ও কার্যক্রম সীমীত করার পাঁয়তারা করছিল এবং এ নিয়ে আমরা যখন হতবিহ্বল, ঠিক তখন সেই জাপান পেছন থেকে চুপটি করে আবার আমাদের কাঁধে হাত রাখল… ডোন্ট অরি, আমরা আছি।
জাপানে নিহতদের সৎকারে পৌঁছার আগে মনে মনে ভয়ে ছিলেন আমাদের রাষ্ট্রদূত। নিহতদের স্বজনদের আক্রোশে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। না, প্রথম সারির অতিথি হিসেবে বিনম্র আতিথেয়তা পেলেন তিনি। দূতাবাসে একটা ভারী খাম খুলতে গিয়ে আবারও ভয় পাচ্ছিলেন তিনি, বিস্ফোরক কিছু নয়তো? না, গুলশান হামলায় নিহত ও আহত বাংলাদেশিদের সহায়তায় নাম না-জানা এক জাপানী নাগরিকের অনুদান, এক মিলিয়ন ইয়েন।
জেনে রাখা ভালো, বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান।বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপান ধরাবাহিকভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে।একসময় মেট্রোরেলকে স্বপ্ন মনে করা হতো। বিশেষ করে বিপুল অংকের অর্থের প্রয়োজনীয়তা সামনে এলে স্বপ্ন ভাবাটাই যেন যৌক্তিক মনে হতো। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের সামনে মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান বাস্তবতারই অপর নাম। ২০১৯ সালের মধ্যেই এই প্রকল্প শেষ হওয়ার দিন গুনছেন নির্মাণকাজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় পিলার দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের বার্তা। অনেক এলাকায়ও তুমুল গতিতে চলছে পাইলিং।
মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত ১৬টি স্টেশন হচ্ছে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর–১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও হোটেল, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা।
প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের কম।
নির্ধারিত সময়ের চার বছর আগেই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু জাপান আমাদের কোয়ালিটি কাজ দিচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করে দিচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক।
একজন বাংলাদেশী হিসেবে এই প্রস্তাবে মন থেকে সমর্থন রইলো…
“অকালে জীবন দেওয়া এই সাতজন ও গুরুতর আহত একজন জাপানির নামে কি আমরা মেট্রোরেলের আটটি স্টেশনের নামকরণ করে তাদের প্রতি আমাদের ঋণ দায় কমাতে পারি না?”
২৪হেল্পলাইন.কম/২০১৮/