আমাদের অনেকেই দেশীয় গ্রুপ অব কোম্পানীতে চাকুরিত আছেন। আপনি যখন দেশীয় গ্রুপ অব কোম্পানীতে অাপনার বিশেষ বন্ধু অথবা নিকটতম ব্যক্তির আমন্ত্রণে তাহার অফিসে যাবেন। সেখানে দেখবেন সবকিছুই সুন্দর, সাজানো গুছানো। সে চাকরিতে ভালভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে তবে একটা বিষয় ছাড়া। তাহার অফিস সময় ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত থাকলেও সে কখনোই সন্ধ্যা ৬টায় বের হতে পারে না। এমনকি তার কোন কাজ না থাকলেও প্রায়ই রাত ৮টা পর্যন্ত অফিসে অবস্থান করতে হচ্ছে। বিষয়টা হল- তার গ্রুপের চেয়ারম্যান যতক্ষণ পর্যন্ত অফিসে থাকেন ততক্ষণ পর্যন্ত অধীনস্থ কোন কর্মকর্তা অফিস ত্যাগ করতে পারেন না। আর গ্রুপের চেয়ারম্যান ছোটখাট অনেক সিদ্ধান্ত নিজেই দেন ও তদারকি করেন।
আমরা জানি বাংলাদেশে এটা খুবই কমন বিষয়। তবে বিষয়টা গভীরভাবে চিন্তা করলে কয়েকটা ইস্যু সামনে চলে আসে। প্রথমত, মালিক নিজে ব্যবসার ছোট খাট বিষয়ে তদারকি করেন কারণ তিনি অধীনস্থদের নৈতিকতার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না অথবা তার অধীনস্থ কর্মকর্তাগণের মধ্যে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার মত যোগ্যতা তৈরী হয়নি। আমাদের দেশে লোকদের গড়পড়তা নৈতিকতাবোধ কম তা অস্বীকার করব না। তবে যে সিদ্ধান্ত একজন কর্মকর্তা নিতে পারে তা মালিক নিজে নিলে অফিসের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। একজন ম্যানেজারের কাজ তাকে করতে না দিলে তাকে চাকরিতে রেখে বেতন দেয়ার অর্থ হয় না। দ্বিতীয়ত, অফিস সময়ের পরে অফিসে অবস্থান করলে প্রতিষ্ঠানের কোন লাভ হয় না তা অনেক মালিক বুঝতে পারে না। অতিরিক্ত সময়ের পরে অফিসে অবস্থান করলে জাতীয় সম্পদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অপচয় হয়। তবে কর্মচারীগণ মানসিকভাবে অস্বস্থিতে থাকার কারণে যে পরিমাণ কর্মদক্ষতা হ্রাস পায় তা পরিমাপ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
ব্যবসার উপর মালিকের সরাসরি প্রভাবের কারণে আমাদের দেশে ব্যবসায়ের সুষ্ঠু সংস্কৃতির আবির্ভাব হচ্ছে না। উপরের উদাহরণে যেহেতু মালিক নিজেই সবকিছুর দেখাশুনা করেন তাই তার মৃত্যুর পর ব্যবসা একটা দারুন হোচট খায়। ধারণা করা যায় মালিকের ছেলে নিশ্চয় মালিকের মত দক্ষ হবে না। ফলে তিলে তিলে গড়ে তোলা একটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগে না। একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশে শতবর্ষী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুব একটা নাই। পৃথিবীর অনেক দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকে।
চলুন দেখা যাক বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ও দীর্ঘজীবি ব্যবসায়ের তালিকা।
প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবসার ধরণ অবস্থান প্রতিষ্ঠাকাল (খ্রীষ্টাব্দ)
Kongō Gumi কনস্ট্রাকশন জাপান ৫৭৮
Nishiyama Onsen Keiunkan
হোটেল জাপান ৭০৫
Koman হোটেল জাপান ৭১৭
Hoshi Ryokan হোটেল জাপান ৭১৮
Tech Kaihatsu মেশিনারী জাপান ৭৬০
Genda Shigyo দাওয়াত কার্ড জাপান ৭৭১
Stiftskeller St. Peter রেস্টুরেন্ট অস্ট্রিয়া ৮০৩
Staffelter Hof মদ জার্মানি ৮৬২
Tanaka-lga ধমীয় পণ্য জাপান ৮৮৫
Sean's Bar বার আয়ারল্যান্ড ৯০০
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
চিত্রের টেবিল দেখে সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক- জাপানে পুরাতন ও দীর্ঘজীবি ব্যবসায় এত বেশী কেন?
গবেষকগণ এ প্রশ্নের সম্ভাব্য ৫টি উত্তর খুঁজে বের করেছেনঃ
দীর্ঘজীবি প্রতিষ্ঠান যেকোন পরিস্থিতিতে পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে।
দীর্ঘজীবি প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে চিনা খুব সহজ। সেটা হতে পারে তার লগো, ব্রান্ডিং, মালিকানা বা অন্যকোন কারণে।
দীর্ঘজীবি প্রতিষ্ঠান ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী।
দীর্ঘজীবি প্রতিষ্ঠান খরচের দিক থেকে খুবই কৃপণ। এরা অযথা টাকা খরচ করে না।
দীর্ঘজীবি প্রতিষ্ঠানের অতি মুনাফালোভী মনোভাব থাকে না।
ব্যবসায়ীরা সমাজ সেবা বা মানব সেবার চেয়ে পণ্য উৎপাদন এবং সেবার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে থাকে যা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
২৪হেল্পলাইন.কম/এপ্রিল,২০১৮/আনোয়ার পারভেজ